বাংলার খবর
দোষ প্রমাণিত হলে পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, জানিয়ে দিল তৃণমূল
বেঙ্গলএক্সপ্রেস নিউজ এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার ১৯ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যয়কে নাকতলার বাড়ি থেকে শনিবার গ্রেফতার করে ইডি। পাশাপাশি, শুক্রবার রাতেই টালিগঞ্জের হরিদেবপুরের এক অভিজাত আবাসনে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলার ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার ৫০০ ও ২ হাজার টাকার নোটের বান্ডিল, ৫৬ লক্ষ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা এবং ৭৯ লক্ষ টাকার গহনা বাজেয়াপ্ত করে ইডি। তদন্তকারী আধিকারিকরা দাবি করেছেন,পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘণিষ্ঠ ছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। শনিবার তাঁকেও গ্রেফতার করে ইডি। এরপরই রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়।
গোটা দিন এই নিয়ে মুখ না খুললেও শনিবার সন্ধ্যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলল তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে যে টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি, সেই টাকা এবং ওই মহিলার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিলেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রীমা ভট্টাচার্য্য ও কুণাল ঘোষ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েই তাঁরা পরিষ্কার করে দিয়েছেন, যতদিন না তিনি দোষী প্রমাণিত হচ্ছেন ততদিন তিনি মন্ত্রী এবং দলের মহাসচিব থাকছেন। যেহেতু, গোটা বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন, তাই যদি আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সরকার তাঁর বিরুদ্ধে নিশ্চিত ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেই জানিয়ে দিলেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এই নিয়ে তিনি নাম না করে বিজেপিকেই নিশানা করেছেন।
শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই কুণাল ঘোষ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা গোটা বিষয়টি ইডি সূত্রে জানতে পারি। এক ভদ্রমহিলার বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা ইডির পক্ষ থেকে টুইট করা হয়। সেই থেকে আমরা বিষয়টা জানতে পারি। তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, যাঁর বাড়ি থেকে এই টাকা উদ্ধার হয়েছে তিনি তৃণমূলের কেউ নন। উদ্ধার হওয়া এই টাকার সঙ্গেও তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। যদি কারও নাম এসে থাকে, তিনি বা তাঁর আইনজীবীরা এই বিষয়ে উত্তর দিতে পারবেন। ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবে একটি সম্পর্কের কথা বলে গ্রেফতার করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু কোন অনুষ্ঠানে কার সঙ্গে কার দেখা হয়েছে, সেটা কোনও বিষয় হতে পারে না। আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস আইন ও আদালতের উপর পূর্ণ আস্থা রাখে। আদালতে বিষয়টি গিয়েছে। বিচারে যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকার তাঁর বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নিশ্চিতভাবেই নেবে।’
সেই সঙ্গে এই বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস কী? এর পিছনে কী আছে? এবং নোট বন্দির সময় এত বেআইনি নগদ কালো টাকা কোথা থেকে এল? তারও দ্রুত তদন্তের পাল্টা দাবি জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। এদিন তিনি বলেন, ‘এই বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস কী? এর পিছনে কী আছে? এবং নোট বন্দির সময় এত বেআইনি নগদ কালো টাকা কোথা থেকে কীভাবে এল? সেটাও তদন্ত করে দেখা উচিত। এর আগে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখেছি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর তদন্ত দীর্ঘমেয়াদী হয়। তাই শুধু একটা গল্প না ছড়িয়ে যত দ্রুত এক বা দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে বিষয়টি জানিয়ে দিতে হবে।’
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই একই মামলায় অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও শুভেন্দু অধিকারীকে তদন্তের মুখোমুখি কেন হতে হয়নি সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতার মেয়র। ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘দুমাস আগে আদালত তদন্তভার সিবিআই-কে দিয়েছে। যদি দু’মাস আগে পার্থ পার্থদা ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে যেত, তাহলে ইডি তদন্ত হত না, কিছু খুঁজেও পেত না। কিন্তু পার্থদা তৃণমূলে ছিলেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে এত কুৎসা হচ্ছে। আমিও ওয়াশিং মেশিনে ঢুকিনি। তাই আমাকেও জেলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু একই মামলায় (নারদ কাণ্ড) অন্য একজন (শুভেন্দু অধিকারী), যিনি বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে গেলেন তাঁকে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়নি। বিজেপিতে গেলে সাধু, তৃণমূলে থাকলে চোর। এই দ্বিচারিতা চলছে। বিজেপি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে রাজনৈতিক কাজে লাগাচ্ছে। তৃণমূল কোনও অন্যায় করে না। কোনও অন্যায় সহ্যও করে না। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে। কিন্তু কেউ ষড়যন্ত্রের শিকার হলে আমরা তার প্রতিবাদও করব।’
অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘২১ জুলাইয়ের সমাবেশের সাফল্য দেখে বিজেপি ভয় পেয়েছে। তাই ২২ তারিখ ইডি অতি তৎপর হয়ে উঠল। কারও সঙ্গে কারও ছবি জুড়ে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে, তাদের সঙ্গেও তো বিজেপির অনেকের ছবি দেখা গিয়েছে!’
এদিন সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বিরোধীদেরও এক হাত নেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের এই বিষয়ে কথা বলার কোনও অধিকার নেই। নীরব মোদিরা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার? দিল্লিতে যখন সোনিয়া গান্ধীকে ডেকে পাঠাল ইডি, তখন কংগ্রেস ও বামেরা গোটা দেশজুড়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখালো। আর সেই ইডি যখন রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের কাউকে গ্রেফতার করছে তখন তারা আনন্দে নাচছে। নয় ইডি খুব ভালো, নয় সর্বক্ষেত্রে ইডি খারাপ। যে কোনও একটা বলুক। ৯৯.৫ শতাংশ কাজ ভাল হচ্ছে। হয়তো .৫ শতাংশ কাজ খারাপ হচ্ছে। দল তা সংশোধন করে নেবে। মাথার উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক রয়েছেন। কিন্তু একটা ঘটনা দিয়ে বাকি ভালো কাজগুলোকে ঢেকে দেওয়া যাবে না। তৃণমূল অটুট ছিল। অটুট থাকবে। আমাদের আইন এবং বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা আছে।’