খেলা-ধূলা
বেঙ্গল এক্সপ্রেসের খবরের জের, জয়িতাকে আর্থিক সাহায্য এক সংস্থার

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: গয়না বন্ধক দিয়ে ঋন নিয়ে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্কুল স্পোর্টসের আসরে মেয়েকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন মা-বাবা। গত ২৭ এপ্রিল বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজে আমরা সেই খবর করেছিলাম। সেই খবরের জেরে শুক্রবার জিমন্যাস্ট জয়িতা মালিকের সমস্ত দায়িত্ব নিল ‘ইন্সুইরেন্স কেয়ার’ নামে এক সংস্থা। জয়িতার মায়ের হাতে তিন লক্ষ টাকার চেক তুলে দিল তারা। জীবন বীমা নিগমের (এলআইসি) কয়েকজন কর্মী মিলে গড়ে তুলেছেন এই সংস্থাটি। যারা মূলত অভাবি ও মেধাবীদের এবং জয়িতার মতো খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ায়।
কল্পনা মন্ডল কলকাতায় বাস চালান। বাস চালক বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালাতে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত ছিল কল্পনার। বাসের প্রায় সারে চার লাখ টাকা ঋণ ছিল। সেই খবর সামনে আসতেই ইন্সুইরেন্স কেয়ার কল্পনার পাশেও দাঁড়ায়। সেই বাসের ঋণ শোধ করে কল্পনা সেই বাসের মালিক। শুক্রবার, কল্পনাকে সঙ্গে নিয়ে চুঁচুড়া সোনাটুলি লেনে জয়িতার বাড়িতে যান ইন্সুইরেন্স কেয়ারের সদস্যরা। কল্পনার হাত দিয়ে তিন লাখ টাকার চেক তুলে দেন জয়িতার মা সুমিতা মালিকের হাতে। জয়িতার ফ্রান্সে যেতে খরচের আড়াই লাখ টাকার পুরোটা দেওয়ার পরও যে পঞ্চাশ হাজার টাকা থাকবে তা দিয়ে জয়িতার সেখানে থাকা, খাওয়া-দাওয়া ও শরীর ঠিক রাখার জন্য খরচ করতে বলেছে ওই সংস্থা। জয়িতার ট্রেনারের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন তাঁরা। আরও যা কিছু প্রয়োজন, তার সব ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে তারা।
জয়িতা হুগলি গার্লস স্কুলের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী। ফ্রান্সে আগামী ১৪-২২ মে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্ব স্কুল স্পোর্টস। সেখানেই আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে সুযোগ পেয়েছেন জয়িতা।সেখানে যেতে আড়াই লক্ষ টাকা প্রয়োজন। নিজের গয়না বন্দক দিয়ে, ঋণ নিয়ে, পরিচিত কয়েকজনের থেকে ধার করে মেয়েকে ফ্রান্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন জয়িতার বাবা জয়ন্ত মালিক ও মা সুমিতা মালিক। জয়িতার বাবা জয়ন্ত মালিক মেলায় খেলনা বিক্রি করেন।সুমিতা দেবী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকার কাজ করেন। অভাবের সংসার কোনও রকমে চলে। এরমধ্যে মেয়ের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা ধার-দেনা করে যোগার করতে হয়েছে। জয়িতা ফ্রান্সে গিয়ে ভালো ফল করবে বলেই আশাবাদী তাঁর মা ও বাবা। ভোর চারটেয় উঠে বাঁশবেড়িয়াতে মেয়েকে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া থেকে সব সময় মেয়েকে উৎসাহ দেওয়া, সবকিছুই জয়ন্ত বাবু করেন বলে জানিয়েছেন জয়িতার মা।আগামী ১৩ মে ফ্রান্সে উড়ে যাবেন জয়িতা। তাঁর ভিসা হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সে যাওয়ার আগে কঠোর অনুশীলন চললেও মায়ের গয়না আর বাবার ঋণের চিন্তায় ঘুম আসছিল না জয়িতার। এদিনের এই সাহায্যের পর, জয়িতা অনেকটাই নিশ্চিন্ত। এবার অনেক বেশি ফোকাস করতে পারবেন তাঁর জিমন্যাস্টিকসে। নিশ্চিন্ত তাঁর মা-বাবা। মেয়ের সাফল্য কামনা করছেন তাঁরা।