আন্তর্জাতিক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে ভয়াবহ শরণার্থী সঙ্কট তৈরি করছে রুশ-ইউক্রেন দ্বন্ধ: দাবি সমীক্ষায়

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ‘যুদ্ধ’ শব্দটা পড়তে যতটা কম সময় লাগে এর ভয়াবহতা ঠিক ততটাই মারাত্মক। সেই কোন প্রাচীন কাল থেকে মানবসভ্যতার বুকে বাঁচার তাগিদে হোক কিংবা দখল করার তাগিদে ঘটে গিয়েছে একের পর এক যুদ্ধ। গোটা বিশ্ব দেখেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর এই একবিংশ শতাব্দীর গোঁড়ায় এসে দাঁড়িয়ে ফের আরও একটি ভয়াবহ যুদ্ধের সম্মুখীন রাশিয়া-ইউক্রেন।
গত ২৪ দিন ধরে চলা এই দুই দেশের যুদ্ধের অঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়ে কোল খালি হয়ে যাচ্ছে বহু মায়েদের। তবুও মাথা নত করতে নারাজ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে আসলেও ইউক্রেন আগ্রাসনে বদ্ধপরিকর রাশিয়া। নির্বিচারে গণহত্যায় রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চেও মুখ পুড়েছে পুতিনের দেশে। তবুও জমি ছাড়তে নারাজ পুতিন।
আর এই দুই দেশের যুদ্ধে গত ২৪ দিনে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬.৫ মিলিয়নেরও বেশি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন অন্তত ৬.৫ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় নাগরিক। এছাড়াও জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা একটি সমীক্ষায় জানিয়েছে যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ছেড়ে উদ্বাস্তুর মতন প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৩.২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের অনুমান বলছে যে, ইউক্রেন-রাশিয়া এবং সিরিয়ার বিধ্বংসী যুদ্ধে বাস্তুচ্যুতির মাত্রা মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। যা দেশ এবং বিদেশে প্রায় ১৩ মিলিয়ন লোককে তাদের নিজেদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে।
আরও পড়ুন: সংখ্যার খেলায় অদ্ভুত মিল, তাহলে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন!
ওই সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে, “১২ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আটকা পড়েছেন। নিরাপত্তার ঝুঁকি, সেতু ও রাস্তার ধ্বংস, সেইসাথে নিরাপদ বাসস্থান কোথায় পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে সংস্থান বা তথ্যের অভাবের কারণে নিজেদের পুরোনো আশ্রয় ত্যাগ করতে অক্ষম বলে অনুমান করা হয়েছে।” শুধু তাই নয়, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত ইউক্রেনে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৬.৪৮ মিলিয়ন। ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলছে যে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে যে যুদ্ধের লড়াই শুরু হয়েছে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে গুরুতর শরণার্থী সংকটের জন্ম দিয়েছে।
এদিকে একটি সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য বলছে, যুদ্ধের আগে ইউক্রেনে মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪৪ মিলিয়নের কাছাকাছি। কিন্তু যুদ্ধের ফলে দেশের অর্ধেক বাসিন্দাই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আটকা পড়েছে বা ছেড়ে যেতে অক্ষম। অথবা ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলিতে পালিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ছুঁয়েছে আকাশ, পুতিনের দেশেও অসহায় অবস্থা সাধারণ নাগরিকদের
শুধু তাই নয়, বুধবার পর্যন্ত যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের ৯.৫৬ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং আরও ২.২ মিলিয়ন লোক দেশ ছেঁড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন। আইওএম-এর অনুমাণ বুধবার পর্যন্ত রুশ হামলা থেকে বাঁচতে ৩ মিলিয়নেরও বেশি ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশ ছেঁড়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন।