বাংলার খবর
ফসলের ভালো ফলনের আশায় কানাইসোর পাহাড় পুজোয় মাতোয়াড়া গ্রামবাসী
বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ী ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত কানাইসোর পাহাড়। শনিবার কানাইসোর পাহাড় পুজোয় হাজার হাজার মানুষ সামিল হয়েছিলেন। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের তৃতীয় শনিবার এই পাহাড় পুজোয় মেতে ওঠেন ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও এ রাজ্যের হাজারো মানুষ।
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ী সীমান্তবর্তী এলাকায় গাড়রাসিনি, খড়িডুংরি সহ যে সমস্ত পাহাড় পুজো অনুষ্ঠিত হয় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাহাড় পুজো হল এই কানাইসোর পাহাড় পুজো। করোনা পরিস্থিতির জন্য গত দু’বছর এই পাহাড় পুজো বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এখানকার পুজোয় এবারে কাতারে কাতারে লোকজন সামিল হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কানাইসোর পাহাড় পুজো অনেক প্রাচীন। মূলত এখানকার আদি জনজাতি বাসিন্দারা চাষবাসের আগে প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে এই পাহাড়ের পুজো করে থাকেন। এদের লোকবিশ্বাস মতে, এই পাহাড় পুজো করলে চাষবাস ভালো হবে। অতিবৃষ্টিতে কেউ বানভাসি হবে না। হড়কাবান হবে না। তাই চাষবাস শুরু করার আগে কৃষিজীবী সবাই পাহাড়ে পুজো দেন।
আরও পড়ুন: বাঁশের আড়ালে লক্ষাধিক টাকার সেগুন কাঠ পাচারের চেষ্টা, গ্রেফতার ১
শোনা যায়, বহু বছর আগে এলাকায় প্রবল বন্যায় ঘরবাড়ি, গরামথান বা গ্রাম রক্ষার দেবতা সমস্ত কিছু ভেসে গিয়েছিল। পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী ঢেঙাম গ্রামের বাসিন্দারা সেই সময় অন্যান্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে সভা করেন। তাঁরাই গ্রাম রক্ষার দেবতাকে এই পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সময় থেকেই এই পাহাড়ে ঢেঙাম গ্রামের মাহালি সম্প্রদায় পূজারী হিসেবে রয়েছেন।
শনিবার এই পাহাড় পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এই পাহাড় পুজোর অনুষ্ঠান দু’দিন ধরে চলে। এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেলাও হয়। দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজন ও কুটুম লোকজন ওই এলাকায় হাজির হন। অন্যান্য গরামথানে পোড়া মাটির হাতি গড়া মূর্তি উপবিষ্ট করে রাখার মত এই পাহাড়েও সেই মূর্তি রেখে পুজো করা হয়।
পুজোয় মুরগি বা ছাগ বলি প্রথা প্রচলিত রয়েছে। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থেকে এই পাহাড়ের দূরত্ব প্রায় ৯কিমি। চাকুলিয়া রেলস্টেশন থেকে এই পাহাড়ের দূরত্ব প্রায় ১১ কিমি। বিনপুর ২ ব্লকের সোন্দাপাড়া গ্রামপঞ্চায়েতের সীমান্তবর্তী কেন্দাপাড়া রাঙামাটি, ডুমুরিয়া ও সীতাপুর এই গ্রামগুলির একেবারে পাহাড়ের পাশে অবস্থিত। পাহাড় পুজো ঘিরে এখানে বড় আকারের মেলা বসেছে । এই মেলাতে লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমস্ত রকমের বাদ্যযন্ত্র ও কৃষি কাজের নানান সামগ্রী পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: প্রধানের সই নকল করে জাল সার্টিফিকেট বানানোর অভিযোগ, গ্রেফতার পঞ্চায়েত কর্মী
পাহাড় পুজোর পরের দিন রবিবার পাশেই কেবলমাত্র আদিবাসীদের বারাঘাটে পৃথক পাহাড় পুজো ও আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়। আদিবাসীদের নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘বঙাবুরু’ বা পাহাড় পুজো পালন করা হয়। তাই রবিবারের আদিবাসীদের পাহাড় পুজোর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার থেকেই দূর দূরান্ত থেকে আগত লোকজন তাঁদের আত্মীয় বাড়িতে এসে থাকেন।