কাঁটা তার পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৭৭, তানজিমের এ যেন এক ব্যতিক্রমী যুদ্ধ
Connect with us

বাংলার খবর

কাঁটা তার পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৭৭, তানজিমের এ যেন এক ব্যতিক্রমী যুদ্ধ

Published

on

Rate this post

বেঙ্গল এক্সপ্রেস নিউজ: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পিলার নম্বর ৭৫৩। আর তানজিমের যুদ্ধের ফলাফল ৫০০ এর মধ্যে ৪৭৭। না এ কোনও সীমান্ত যুদ্ধের ফলাফল নয়, এ এক জীবন যুদ্ধের সত্য ঘটনা।

জলপাইগুড়ির নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে থাকা ছ’টি গ্রামের মধ্যে একটি হল সিপাই পাড়া। এই গ্রামের বাসিন্দা তানজিম সাদিয়ার এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ৪৭৭। ওপারে বাংলাদেশ, জিরো পয়েন্ট। সামনে অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে দাড়িয়ে আছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ান। গমীরাপাড়া হাই স্কুলের পোশাক পরা তানজিমকে নিয়ে সশস্ত্র বিএসএফ জওয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে দিলওয়ার হোসেন। কখনও চোখাচুখি হতেই মিলতো স্কুলে যাওয়ার অনুমতি, আবার কখনও মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হত সীমান্ত পাহারায় থাকা বিএসএফ ওয়ানের অনুমতির জন্য।
এভাবেই চলছিল এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৫০০ মধ্যে ৪৭৭ পেয়ে গ্রামকে চমকে দেওয়া তানজিম সাদিয়ার বাবা দিলওয়ার হোসনের দিন গুলো। তবে ইতিহাস বলে, এই পৃথিবীতে যাঁরাই কিছু সৃষ্টি করেছে, তাঁদের কাছে ভৌগোলিক অবস্থান কখনওই শীর্ষে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কাঁটা তারের বেড়া দিয়েও যেমন আটকানো যায়নি তানজিমাকে। বাবা দিলওয়ারের বেরুবাড়ী বাজারে সামান্য ভাড়া নেওয়া ওষুধের দোকান। তার মধ্যেও হাজার কষ্ট করেই তিন মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। বড় মেয়ে তানজিনের এই সাফল্যে যখন গোটা গ্রাম উচ্ছ্বসিত তখন দিলওয়ারের দু’চোখের কোনটা অজান্তেই চিকচিক করে উঠছিল।
আর্থিক এবং ভৌগোলিক- দু’টি বাধাকেই টপকে আজ তানজিম এগিয়ে চলেছে।
গ্রামের মেয়ের এই উদ্যমী মনভাবকে কুর্নিশ জানাচ্ছে প্রতিবেশী নূর ইসলাম চাচা থেকে সবাই। ‘তানজিমের বাবার আর আমি একসঙ্গে স্কুলে পড়াশোনা করেছি। আজ বন্ধুর মেয়ের এই সাফল্যে আমি তো বটেই এই গ্রামের সবাই আজ গর্বিত। গর্তের মধ্যে পদ্ম ফুল ফুটিয়েছে তানজিম। মনের ইচ্ছা থাকলে হাজার প্রতিকূলতাকে জয় করেও তে ভালো রেজাল্ট করা যায় তা প্রমাণ করে দিয়েছে তানজিম। ওর এই ইচ্ছাশক্তি সকলকে অনুপ্রাণিত করবে। আজ ওর মাধ্যমেই আমাদের এই অখ্যাত গ্রামের কথা গোটা রাজ্যের মানুষ জানতে পারছে। তাই ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যতটুক পারি আমরা ওর পাশে থেকে সাহায্যে করে যাব’- এমনটাই জানালেন গর্বিত প্রতিবেশি নূর ইসলাম।
গমীরাপাড়া হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ৪৭৭ নম্বর পেলেও তেমন খোঁজ পড়েনি তানজিমের। কারণ হয়তো সেই দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থান, কাঁটা তারের বেড়া, জিরো পয়েন্ট, বিএসএফ। তবে তানজিমের যুদ্ধ জয়ের খবর পেয়েছেন গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য সামসুল হক। মুখে একগাল হাসিতেই বুঝিয়ে দিলেন তানজিমের এই সাফল্যের জন্য কতটা গর্বিত এই অজপাড়া গাঁয়ের সাধারণ কৃষি কাজ করে খেটে খাওয়া মানুষ গুলো। একদিকে ভৌগোলিক অবস্থানগত বাধা, তার ওপর দূর-দূরান্ত পর্যন্ত নেই কোনও প্রাইভেট পড়ানোর মতো গুরু। প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পৌঁছতে হত স্কুলে। নিজে এবং বাবা আর স্কুলের নিয়মিত ক্লাসের পড়ার সাহায্যেই উচ্চমাধ্যমিকে ৫০০ তে ৪৭৭ পেয়েছে। তানজিমের ইচ্ছে শিক্ষিকা হওয়ার। যাতে তার মতো গ্রামের আর পাঁচটা তানজিমদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে এত কষ্টের মুখে পড়তে না হয়। এমনটাই জানাল জিরো পয়েন্টর হিরোইন তানজিম সাদিয়া।
ওপরদিকে, বেরুবাড়ী গোমীরাপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণ্ময কুমার রায় জানান, ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে জিরো পয়েন্ট থেকে খুব কষ্ট করেই পড়াশোনা করে তানজিম ভালো ফল করায় আমরা খুব খুশি। জিরো পয়েন্ট থেকে জলপাইগুড়িতে এসে পড়াশোনা করত। ও ছোট থেকেই খুব মেধাবী। মাধ্যমিকেও স্ট্যান্ড করেছিল। তবে আমরা ভেবেছিলাম ও ৪৯০ এর কাছাকাছি পাবে। সেই জায়গায় নম্বরটা একটু কমই এসেছে। তবে আমরা খুশি। ভবিষ্যতে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করতে এবং গবেষণা করতে চায় তানজিম। আমরা সব সময় ওর এবং ওর পরিবারের পাশে আছি।’

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.